Saturday, October 1, 2011

তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনঃ আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবীতে জুম্মা ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশি নির্যাতন!!!

 আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে গত ৭ আগস্ট ২০১১ ইং তারিখে পার্বত্য চট্রগ্রামের খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের আনুমানিক ৯০০ (নয়শত) জুম্মা ছাত্র সম্বিলিত একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে আইন শৃংখলা রক্ষার অজুহাতে নিরাপত্তা বাহিনীর বেদম প্রহার ও নির্মম নির্যাতনে ২২ (বাইশ) জন ছাত্র আহত হয়েছে । তবে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন বিক্ষোভকারী ছাত্রের উপর আক্রমণ ও প্রহারের অভিযোগটি সুকৌশলে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করেছেন



দেশের অন্যতম নিরপেক্ষ বাংলা পত্রিকা মাসিক দোয়েল এর আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স (জিএইচারডি)দি হেগনেদারল্যান্ডস এর বাংলাদেশ অবজারভার এডভোকেট শাহানুর ইসলাম (সৈকত) এর নেতত্বে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পূর্ণ তথ্যানুসন্ধান দল গত ১৯ শে আগস্ট ২০১১ ইং সাল থেকে ২২ শে আগস্ট ২০১১ ইং তারিখ পর্যন্ত ঘটনাটি সরেজমিনে তথ্যানুসন্ধান করেন। এসময় তথ্যানুসন্ধান দলের সদস্যগন নির্যাতিত ব্যক্তি, প্রত্যক্ষদর্শী, আইন শ্বংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন এবং তা সুপারিশসহ প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করেন জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ও গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স (জিএইচারডি) প্রথম মানবাধিকার সংগঠন যারা ঘটনাটি সরেজমিনে তথ্যানুসন্ধান করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন । থ্যানুসন্ধান কালে সাদা পোশাকের আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সর্বদা থ্যানুসন্ধান দলকে অনুসরন করতে থাকে এবং  থ্যানুসন্ধান দলের প্রধান এডভোকেট শাহানুর ইসলাম (সৈকত) কে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন  প্রশ্ন করে একটি ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে।
 

স্থানীয় প্রশাসন বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রণকারী জুম্মা ছাত্রদের আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বহিনী কর্তৃক নির্মম নির্যাতনসহ কৃত অন্যান্য সকল অপরাধমূলক কাজ অস্বীকার করে জুম্মা ছাত্ররা ভবিষ্যতে যদি আবার আদিবাসিদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে কোন বিক্ষোভ কমসুচির আয়োজন করে তবে তা পুলিশ প্রশাসন কঠোর হস্তে দমন করবে, এমনকি তাতে আন্দলোনকারীদের ভবিষ্যৎ জীবন নষ্ট হতে পারে বলেও হুমকি প্রদান করেন স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক পুলিশ সদস্যদের দ্বারা কৃত নির্যাতনসহ সকল অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড অস্বীকার করায় এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে পুলিশ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এ বিষয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক কোন ব্যবস্থা করা হয় নি এবং ভবিষ্যতেও কোন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা করা হবে নাবরং তাদের পদন্নতি দিয়ে পুরঃস্কিত করা হবে।


চলতি বছরেরে ২৬ জুলাই বিদেশী কূটনীতিকদের সামনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনির প্রদত্ত বক্তব্যের প্রতিবাদে এবং আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবয়নের দাবীতে ৭ আগস্ট ২০১১ ইং তারিখে পার্বত্য চট্রগ্রামের ৮টি আদিবাসী সামাজিক  ছাত্র সংগঠন যথাঃ ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরাম (টিসিএফ), বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল (বিএমসি), তঞ্চঙ্গা ছাত্র কল্যাণ সংস্থা, ম্রো স্টুডেন্টস কাউন্সিল, বাংলাদেশ খ্যাং স্টুডেন্টস কাউন্সিল, চাক স্টুডেন্টস কাউন্সিল, বাংলাদেশ বম স্টুডেন্টস কাউন্সিল এবং খুমি স্টুডেন্টস কাউন্সিল এর ডাকে এ বিক্ষোভ  মিছিল ও সমাবেশ তিন পার্বত্য জেলায় অনুষ্ঠিত  হয়।



নির্যাতিত ছাত্র   প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে ঘটনার দিন সকাল আনুমানিক ১১ টার সময় জুম্মা ছাত্ররা শহরের শাপলা চত্বরের উদ্দেশ্যে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ গেট থেকে একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল আরম্ভ করতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশের সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট এবং কোতোয়ালি পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত  কর্মকর্তাসহ আনুমানিক  ৫০-৬০ জন পুলিশ সদস্য কলেজ গেটের সামনে তাদেরকে বাঁধা প্রদান করেন।  সময় পুলিশের সাথে বাক-বিতন্ডা হলে পুলিশ রাজিব ত্রিপুরা ও অমর সিংহ চাকমা নামক দুই জুম্মা ছাত্রকে জোরপূর্বক আটক করে। পরবর্তীতে, ছাত্র-ছাত্রীদের তোপের মুখে পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। এময় পুলিশ প্রশাসন বিক্ষোভকারীদের মিছিল সহযোগে শাপলা চত্বর পর্যন্ত না গিয়ে চেঙ্গিস স্কয়ার পর্যন্ত যাওয়ার নির্দেশ দেন।


পুলিশের নির্দেশ মেনে ছাত্র-ছাত্রীরা  কলেজ গেট থেকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল সহযোগে সামনের চেঙ্গিস স্কয়ারের দিকে এগুতে থাকলে পুলিশ সদস্যরা কোন প্রকার উস্কানি ছাড়া হঠাৎ বিক্ষোভকারিদের উপর লাঠি চার্জ শুরু করে। একই সাথে ছাত্রদের কিলঘুষিলাথি এবং মেয়ে বিক্ষোভকারিদের টানা হিঁচড়া করতে থাকে। এসময় পুলিশ লাঠি দ্বারা চৈতি চাকমা ও তিথি ত্রিপুরা নামক দুই ছাত্রী মাথা ও ত্লপেটে আঘাত করলে তারা  বেহুঁশ হয়ে পড়ে। এতে বিক্ষোভকারীরা উত্তেজিত হয়ে সামনের দিকে এগুতে থাকলে পুলিশ মিছিলের উপর বেপরোয়াভাবে লাঠি চার্জ করতে থাকে। এতে ২২ জন জুম্মা ছাত্র আহত হয়যাদের মধ্যে চার জন মারাত্বকভাবে আহত হন। এ সময় কিছু বহিরাগত বাঙ্গালী দুস্কৃতিকারী পিছন থেকে পুলিশের দিকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ধাওয়া -পালটা ধাওয়া  শুরু হয়। এতে চার পুলিশ সদস্যও সামান্য আহত হয় বলে পুলিশ প্রশাসন তথ্যানুসন্ধান দলকে জানান।

পরবর্তীতে, মিছিল চেঙ্গিস স্কয়ারে পৌছলে পুলিশ তাদের ব্যানার কেড়ে নিয়ে আবারও মিছিলকারী ছাত্র -ছাত্রীদের উপর বুট দ্বারা লাথি এবং লাঠি ও রাইফেলের বাট দিয়ে বেধড়ক মারপিট শুরু করে। এতে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ গেট সংলগ্ন রাস্তায় বৈদ্যুতিক খুটি ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করে সর্বপ্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় । এ সময় পুলিশসদস্য কর্তৃক ফের বাধাপ্রাপ্ত ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বিক্ষোভকারী ছাত্ররা কলেজ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনা সদস্য মোতায়ন করে কলেজ প্রাঙ্গণ অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পুলিশ ও সেনা সদস্য কতৃক প্রায় দেড় ঘন্টা অবরুদ্ধ রাখার পর পুলিশ প্রশাসন, কলেজ কতৃপক্ষ ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে জেলা প্রশাসন ও কলেজ কতৃপক্ষের সাথে বিক্ষোভকারী ছাত্ররা পরের দিন ৮ আগস্ট, ২০১১ ইং তারিখে শান্তি আলোচনায় রাজি শর্তে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা কলেজ  ক্যাম্পাস খুলে দেন। 

ছাত্ররা বাড়ি ফিরে যাবার সময় সেনা ও পুলিশ সদস্যরা উদ্দেশ্যমুলকভাবে কলেজ গেটে ছাত্রছাত্রীদের দেহ তল্লাশী ও জিঙ্গাসাবাদ করতে থাকে। এসময় রাজেশ ত্রিপুরা নামক এক ছাত্রকে কলেজ গেট থেকে ধরে উদ্দেশ্যমুলকভাবে চেঙ্গিস স্কয়ারে নিয়ে ২০-২৫ জন পুলিশ সদস্য মিলে কিল, ঘুষি, বুট দিয়ে লাথি মারাসহ লাঠি ও রাইফেলের বাট দিয়ে বেধড়ক মারপিট করেফলে সে মারাত্বকভাবে আহত হন সাথে থাকা কলেজের ছাত্র পরিচয় পত্র দেখানোর পরও পুলিশ সদস্যা তাকে অমানবিক নির্যাতন করে। এতে সে মারাত্তকভবে আহত হয়। পরবর্তীতে লেজের অধ্যক্ষের নিকট থেকে তার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পুলিশ সদস্যরা তাকে ছেড়ে দেয় বলে নির্যাতিত ছাত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা তথ্যানুসন্ধান দলকে জানান।

ঘটনাটি মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং এই লজ্জাকর মানবাধিকার লঙ্ঘন বিনা প্রতিকারে মেনে নেওয়া যায় না শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের অধিকার একটি অনস্বীকার্য মৌলিক মানবাধিকার এবং পুলিশ কর্তৃক উল্লেখিত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে বাঁধা প্রদান ও বিক্ষোভকাররিদের নির্যাতন করা বাংলাদেশ সংবিধান ও বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বীকৃত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিসমূহের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৬ নং অনুচ্ছেদে প্রত্যেক নাগরিকেরকের সমবেত হওয়ার ও শান্তিপুন জনসমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ করার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তাছাড়া, সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনা পত্রের ২০ নং ধারা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির ২১ নং ধারায় শান্তিপূর্ণভাবে সম্মিলিত ও সমাবেত হওয়ার অধিকার স্বীকার করা হয়েছে। 

আবার বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৫ (৫) নং অনুচ্ছেদে নির্যাতনকে সম্পূর্নভাবে নিশিদ্ধ করা হয়েছে। তাছাড়া সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনা পত্রের ০৫ নং ধারা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির ০৭ নং ধারা সকল প্রকার নির্যতনকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে। এছাড়া নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চুক্তি-১৯৮৪ তে নির্যাতনকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। উল্লেখিত চুক্তিগুলোর সদস্য রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ চুক্তিগুলো মানতে বাধ্য অর্থাৎ শন্তিপূর্ণ  বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আধিকার নিশ্চিত করা ও নির্যাতন দমনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করতে বাধ্য

  
আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে গত ৭ আগস্ট ২০১১ ইং তারিখে পার্বত্য চট্রগ্রামের খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের আনুমানিক ৯০০ (নয়শ) জুম্মা ছাত্র সম্বিলিত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে আইন শৃংখলা রক্ষার অজুহাতে নিরাপত্তা বাহিনীর বেদম প্রহার  নির্মম নির্যাতনে ২২ (বাইশ) জন ছাত্র আহত হওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আদিবাসীদের মৌলিক মানবাধিকার অর্জনের কণ্ঠস্বর চিরতরে স্তব্ধ করার দীর্ঘ পরিকল্পনা সফল করার একটি স্পষ্ট প্রয়াস মাত্র বলে জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ও গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স (জিএইচআরডি) মনে করে। জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ও গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স (জিএইচআরডি) উপরোল্লিখিত মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনার দ্রুত সম্পূর্ণ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ী ব্যাক্তিদের বিরদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা  গ্রহণ, নির্যাতিত ছাত্রদের উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান ও উপর্যুক্ত ক্ষতিপুরনসহ তাদের পুনর্বাসনের জোর দাবী জানাচ্ছে 

Thursday, September 8, 2011

প্রেস বিজ্ঞপ্তিঃ আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের জুম্মা ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর হামলায় ২২ ছাত্র আহত হওয়ার বিষয়টি সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর অস্বীকার !

আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে ৭ আগস্ট ২০১১ ইং তারিখে পার্বত্য চট্রগ্রামে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের আনুমানিক ৯০০ জুম্মা ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর  নির্যাতনে ২২ ছাত্র আহত হয়েছে। তবে পুলিশ প্রশাসন বিক্ষোভকারী ছাত্রের উপর শারীরিকভাবে আক্রমণ এবং প্রহারের বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করেছে।

জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স (জিএইচারডি), দি হেগ, নেদারল্যান্ড এর বাংলাদেশ অবজারভার এডভোকেট শাহানুর ইসলামের নেতত্বে পাঁচ সদস্যের এক তথ্যানুসন্ধান দল সম্প্রতি সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং নির্যাতিত ও চাক্ষুষ সাক্ষীদের সাথে কথা বলে তাদের বিবৃতি লিপিবদ্ধ করেন জাস্টিসমেকারস বাংলাদেশ ও গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স (জিএইচারডি) ই প্রথম মানবাধিকার সংগঠন যারা ঘটনাটি সরেজমিনে তথ্যানুসন্ধান করেন।

পুলিশ প্রশাসন ঘটনার দিন তাদের দ্বারা কৃত সব অপরাধ মূলক কাজ অস্বীকার করে বিক্ষোভকারিরা যদি আদিবাসিদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে ভবিষ্যতে আবার এই রকম বিক্ষোভ করমসুচি আয়োজন করে তবে ভবিষ্যতে পুলিশ প্রশাসনের নিকট থেকে খারাপ ব্যবহার এমনকি তাদের জীবন নষ্ট হতে পারে বলে হুমকি প্রদান করেন। পুলিশ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কৃত সকল অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড অস্বীকার করায় এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে পুলিশ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এ বিষয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা করা হইয় নি এবং ভবিষ্যতে কোন ব্যবস্থা করা হবে না।

ঘটনার দিন জুম্মা ছাত্ররা খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ গেট থেকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল সহযোগে সামনের চেঙ্গিস স্কয়ারের দিকে এগুতে থাকলে খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশের সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট এবং কোতোয়ালি পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত  কর্মকর্তাসহ আনুমানিক ৬০ জন পুলিশ সদস্য কলেজ গেটের সামনে তাদেরকে বাঁধা প্রদান করেন। এসময় বিক্ষোভকারি ছাত্ররা সামনে এগুতে চাইলে পুলিশ সদস্যরা কোন প্রকার উস্কানি ছাড়া 
হঠাৎ বিক্ষোভকারিদের উপর লাঠি চার্জ শুরু করে । এসময় পুলিশ সদস্যরা ছাত্রদের কিল, ঘুষি, লাথি এবং মেয়ে বিক্ষোভকারিদের টানা হিঁচড়া করতে থাকে। এতে ২২ জন জুম্মা ছাত্র আহত হয়, যাদের মধ্যে চার জন মারাত্বকভাবে আহত হন। পুলিশ সদস্য কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বিক্ষোভকারী ছাত্ররা কলেজ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনা সদস্যরা কলেজ প্রাঙ্গণ ঘিরে রাখে এবং ছাত্ররা বাড়ি ফিরে যাবার সময় এক ছাত্রকে ধরে উদ্দেশ্যমুলকভাবে অমানবিক নির্যাতন করে, ফলে সে মারাত্বকভাবে আহত হন।

ঘটনাটি মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং এই লজ্জাকর মানবাধিকার লঙ্ঘন বিনা প্রতিকারে সহ্য করা যায় না। শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার একটি অনস্বীকার্য মৌলিক মানবাধিকার এবং পুলিশ কর্তৃক উল্লেখিত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে বাঁধা প্রদান ও বিক্ষোভকাররিদের নির্যাতন করা বাংলাদেশ সংবিধান ও বাংলাদেশ কর্তৃক স্বীকৃত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিসমূহের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। উপরোল্লিখিত ঘটনাটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আদিবাসীদের মৌলিক মানবাধিকার অর্জনের কণ্ঠস্বর চিরতরে স্তব্ধ করার দীর্ঘ পরিকল্পনা সফল করার একটি স্পষ্ট প্রয়াস মাত্র।
 
জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ও গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স (জিএইচআরডি) উপরোল্লিখিত মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনার দ্রুত সম্পূর্ণ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ী ব্যাক্তিদের বিরদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানাচ্ছে।

Press Release: Government security forces deny assault of 22 Jumma students during a peaceful student procession for constitutional recognition of indigenous people

22 indigenous students beaten and tortured by the police in KhagrachhariChittagong Hill TractsBangladesh


Police authorities have denied any fault after physically attacking and indiscriminately beating 22 Jumma students during a peaceful demonstration of 900 students of Khagrachari College for constitutional recognition of indigenous people in Bangladesh on the 7th of August 2011.

GHRD’s Country Observer for Bangladesh and also Cofounder of JusticeMakers Bangladesh, Advocate Shahanur Islam went to the spot to investigate the physical assaults and beatings – taking eyewitness and victim statements. GHRD was the first human rights organisation to investigate the event.

The police have denied all wrongdoing and have threatened that if such a peaceful demonstration were to occur again, protestors can expect even worse retaliation by the police and could lose their careers. Given the denial of fault by the police authorities, it is no surprise that no case has been filed or registered with the authorities.

As the procession left from the college compound gate, upwards of 60 policemen, including the Assistant Superintendent of the Khagrachari Police and the Officer in Charge of the Kotowali Police Station, created a barrier to direct the flow towards Chengis Square. There, they suddenly attacked the students with batons, kicking and slapping them.  22 students were injured, among which four were severely injured. As the procession was heading back, officers and army men surrounded the college gate and the hospital, they picked out one student, and indiscriminately beat him, resulting in severe injured. 

This gross human rights violation cannot be tolerated. The right to peaceful assembly is an undeniable human right and the police actions are a clear violation of Bangladesh’s commitments under international human rights treaties. The events reported above were just one of the many cases where the government showed clear intention to bring a halt to the voice of the indigenous people fighting to have their fundamental rights recognized.

GHRD and Justicemakers Bangladesh demand that a full and impartial investigation into the police misconduct is required and that those responsible are punished.

Monday, August 1, 2011

বিশেষ প্রতিবেদন: পার্বত্য চট্রগ্রামে সংখালঘু জুম্মা পরিবারের উপর হামলার সময় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহীনি রহস্যজনকভাবে নিরব ভুমিকা পালন করেন।

২০১১ সালের প্রথমার্ধে ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিল মাসে দুটি পৃথক আক্রমনে পার্বত্য চট্টগ্রামে সংখালঘু পাহাড়ী আদিবাসী সম্প্রদায়ের শতাধিক বাড়ী, একটি স্কুল এবং দুইটি বৌদ্ধ মন্দির ভষ্মিভূত হ্য়, যাতে ছয় শতাধিক আদিবাসী সংখ্যালঘু পুরুষ, মহিলা এবং শিশু গৃহহীন এবং অনেক মারাত্বকভাবে আহত হন ।

সম্প্রতি গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স, নেদারল্যান্ডস এর বাংলাদেশ অবজারভার ও জাস্টিস মেকার্স বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট শাহানুর ইসলাম (সৈকত) এর নেতৃত্ত্বে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তথ্যানুসন্ধান দল গত ১৩ থেকে ২২ মে, ২০১১ ইং তারিখ পর্যন্ত আক্রান্ত অঞ্চল সরেজমিনে তদন্তের সময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাথে কথা বলেন। উক্ত তথ্যানুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় যে উক্ত আক্রমণে ৬৩৮ পাহাড়ী আদিবাসী সংখ্যালঘু সম্রদায়ের পুরুষ, মহিলা ও শিশু প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তাদের ঘরবাড়ি হারিয়ে এখনো অনেক অস্থায়ী আশ্রয় বা খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করছে।


তথ্যানুসন্ধানদল নিশ্চিত হয়েছে যে উভয় আক্রমনের সময় নিরাপত্তা বাহিনী উপস্থিত থেকে সহিংসতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন না করে রহস্যজনক ভাবে নীরব ভুমিকা পালন করে এবং ধ্বংসলীলা সচেতনভাবে প্রত্যক্ষ করে ।বাংলাদেশ সরকার উক্ত ঘটনাদুটি যথাযথভাবে তদন্তপুর্বক উপর্যুক্ত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে ।  স্থানীয় কর্তৃপক্ষও উক্ত হামলার ঘটনা দুটি তদন্তপুর্বক সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত এই হামলার জন্য দায়ী কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে নি।


সরকার উক্ত ঘটনার বিষয়ে স্বচ্ছভাবে তদন্ত সম্পন্নপুর্বক প্রতিবেদন প্রকাশ না করে উক্ত এলাকায় 'জরুরী' আইন জারী করে উক্ত এলাকায় মানবাধিকার কমীদের অঘোষিতভাবে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে । গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স, নেদারল্যান্ডস ও জাস্টিস মেকার্স বাংলাদেশ ট্রাস্ট দলের তদন্ত চলাকালে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা আছে বলে দৃঢ় সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং তথ্যানুসন্ধান দলের প্রধান এড। শাহানুর ইসলাম (সৈকত) কে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং পুলিশের জেলা বিশেষ শাখা সদস্যদের দ্বারা ইন্টারোগোরেট, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানি করা হয় ।


উল্ল্যেখিত আক্রমণদ্বয় পার্বত্য চট্টগ্রামে সংখালঘু পাহাড়ী আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্যদের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষায় সরকারের ব্যর্থতার সুস্পষ্ট উদাহরণ । উপরন্তু, উল্লেখিত আক্রমনের সময় আইন শৃংখলা বাহিনীর উপস্থিতি ও আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা না করে রহস্যজনক ভাবে নীরব থাকার বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্ত না করায় বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে সংখালঘু পাহাড়ী আদিবাসী সম্প্রদায়ের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা করতে হ্য় অনিচ্ছুক বা রক্ষা করতে অক্ষম বলে প্রতিয়মান হয়। এ জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্য আদিবাসী বিষয়ক আন্তর্জাতিক ফোরামের নিকট কৈফিয়ত দিতে হবে ।
ঘটনা-১

জমি দখলের উদ্দেশ্যে বাংগালী সেটলাররা জুম্মাদের উপর একের পর এক সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়ে আসছে।

গত ১৭ এপ্রিল 2011 খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলাধীন (গুইমারা থানার অন্তর্গত) হাফছড়ি ইউনিয়নের হাতিমুড়া এলাকায় সেটেলার বাঙালিরা জুম্মদের জায়গা-জমি দখল করতে গেলে পাহাড়ীরা বাধা দেয় এবং এতে এক পর্যায়ে সংঘর্ষের রূপ নিলে সেটেলার বাঙালিরা সংঘবদ্ধভাবে হাফছড়ি ইউনিয়নের শনখোলা পাড়া, তৈকর্মা পাড়া, রেমরম পাড়া, সুলুডং পাড়া, পথাছড়া ইত্যাদি জুম্ম গ্রামে এবং মানিকছড়ি উপজেলার মহামুনি ক্যজাই কার্বারী পাড়া ও মানিকছড়ি বাজারে হামলা চালিয়ে শতাধিক ঘরবাড়ীতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ভাঙচুর করে এবং চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে জুম্ম বাসযাত্রীদের নামিয়ে বেদম মারধর ও জখম করে। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রহস্যজনকভাবে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। এতে আশীষ চাকমা নামক এক জুম্ম এখনো নিখোঁজ রয়েছে।

গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স ও জাস্টিস মেকার্স বাংলাদেশ ট্রাষ্ট এর যৌথ তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে যে, মেনা মারমার ভোগদখলীয় প্রায় ১৫ একর পাহাড়ী ভূমি (বর্তমানে রুইহাঅং মারমা পীং পিজাঅং মারমার ভোগদখলীয়) জয়নাল পিসি নামে জনৈক সেটেলার বাঙালি দীর্ঘদিন ধরে জবরদখল করার চেষ্টা করে আসছিল। গত ১৪ এপ্রিল জুম্মদের বিজু, সাংগ্রাই ও বৈসু উৎসব চলাকালে সেটেলার বাঙালিরা হাফছড়ি ইউনিয়নের হাতিমুড়া এলাকায় উক্ত জায়গা-জমি দখল করতে যায়। সেসময় জুম্মদের বাধার মুখে সেটেলার বাঙালিরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। গত ১৭ এপ্রিল সকাল ১১ টার দিকে সেটেলার বাঙালিরা দলবদ্ধভাবে আবার উক্ত জমি জবরদখল করতে গেলে পাহাড়ীরা বাধা দেয় এবং এক পর্যায়ে সংঘর্ষের রূপ নেয়। এই সংঘর্ষে তিনজন সেটেলার বাঙালি নিহত এবং ১ জন গুরুতর জখম হয় যিনি পরবর্তীতে হাসপাতালে মৃর্ত্যুবরণ করেন।


এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রামগড়ের হাতিমুড়া, মানিকছড়ির গচ্ছ্যাবিল ইত্যাদি এলাকা থেকে শত শত সেটেলার বাঙালি সংঘবদ্ধ হয়ে জুম্মদের গ্রামে হামলা শুরু করে। এ সময় সেনাবাহিনীর টহল দল এলাকায় অবস্থান নিলেও সেটেলার বাঙালিদের কোন বাধা প্রদান করেনি বলে তথ্যানুসন্ধান দলের তদন্তে জানা গেছে। সেনা সদস্যরা রাস্তায় টহল দিতে থাকে আর অন্যদিকে সেটেলার বাঙালিরা জুম্ম গ্রামে ঢুকে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট শুরু করে। এ হামলায় হাফছড়ি ইউনিয়নের শনখোলা পাড়া, তৈকর্মা (কচু ভান্তে) পাড়া, রেমরম পাড়া, সুলুডং পাড়া এবং পথাছড়ায় য় ১টি বৌদ্ধ মন্দিরসহ প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ীসম্পূর্ণভাবে ভস্মিভূত হয়।
 
এ সময় সেটেলার বাঙালিরা খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের জালিয়াপাড়ায় শান্তি পরিবহনসহ যানবাহন থামিয়ে জুম্ম যাত্রীদের উপর হামলা করে। তাদেরকে গাড়ী থেকে নামিয়ে টেনে-হেচড়ে বেদম মারধর ও লাঠিপেটা করে। এতে কমপে ১৬ জন জুম্মকে জখম করা হয় বলে জানা যায়। আহতদের মধ্যে গুইমারার বটতলী গ্রামের বাসিন্দা মিজ মিথু মারমা (১৩) পিতা রেম্রাচাই মারমা এবং যৌথ খামার এলাকার বাজার চৌধুরী পাড়ার অধিবাসী পাইক্রা মারমা (৫০) স্বামী মংসা মারমা রয়েছে। তাদের মধ্যে মিজ মিথু মারমাকে গুরুতর জখম অবস্থায় মানিকছড়ি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

অন্যদিকে সন্ধ্যার দিকে সেটেলার বাঙালিরা নিহত বাঙালিদের লাশ নিয়ে মানিকছড়ি এলাকায় জঙ্গী মিছিল বের করে। অভিযোগ রয়েছে যে, লাশসহ মিছিল বের করার সময় প্রশাসনের তরফ থেকে সেটেলার বাঙালিদের বাধা প্রদান করা হয়নি। এভাবে সেটেলার বাঙালিদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে দিয়ে মানিকছড়ি উপজেলার মহামুনি এলাকায় ক্যজাই কার্বারী পাড়ায় হামলা চালানো হয়। এই হামলায় ক্যজাই কার্বারী পাড়ায় রাজার বৌদ্ধ মন্দিরসহ ১১টি জুম্ম ঘরবাড়ী সম্পূর্ণভাবে ভস্মিভূত হয়। অপরদিকে মানিকছড়ি বাজারে জুম্মদের ৬টি দোকান ও ৭টি বাড়ীঘর লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়। তার মধ্যে মংসাজাই মারমার মুদি দোকান, রাংহাঅং মারমার চা দোকান, উজ্জল রাখাইনের কাপড়ের দোকান, চাইহাপ্র“ মারমার মুদি দোকান লুটপাট হয় বলে তথ্যানুসন্ধান দলের তদন্তে জানা গেছে।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়া এবং চুক্তি অনুসারে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণে নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় সেটেলার বাঙালিরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় জুম্মদের জায়গা-জমি অব্যাহতভাবে জবরধখল করে চলেছে। এক্ষত্রে নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় সেটেলার বাঙালিরা নানা অজুহাত সৃষ্টি করে জুম্মদের উপর একে পর এক সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়ে আসছে।


সেই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে অশান্ত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষে নানাভাবে উস্কানীমূলক অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে। শনখলা পাড়ায় সংঘর্ষের প্রাথমিক পর্যায়ে ইউপিডিএফ-এর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা উত্তেজনা সৃষ্টির লক্ষে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে বলে তথ্যানুসন্ধান দলের নিকট স্থানীয় অধিবাসীরা অভিযোগ করেন।

ঘটনা-২
বসত বাড়ী থেকে উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে বাংগালী সেটলাররা পাহাড়ী জুম্মাদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা চালায়।

জনৈক বাংগালী সেটলার এর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গত ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১১ ইং তারিখে রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলাধীন গুলসাখালী ইউনিয়নের গুলশাখালী ও রাঙ্গীপাড়া এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে সেটেলার বাঙালি কর্তৃক জুম্মদের গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলা ও ঘরবাড়ীতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ঘটায়।
গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স ও জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ট্রাষ্ট এর যৌথ সরেজমিন তদন্তে জানা যায় যে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১১ লংগদু উপজেলাধীন গুলশাখালী ইউনিয়নের রহমতপুর গ্রাম থেকে সাবের আলী (৩৫) পিতা নেহাত আলি ও মো: শহীদ (৩৩) পিতা জুল্যা পাগালা নামে দু’জন সেটেলার বাঙালি গুলশাখালী এলাকায় জঙ্গল থেকে ফুলঝাড়– সংগ্রহ করতে যায়। তাদের মধ্যে মো: শহীদ ঘরে ফিরলেও সাবের আলী ফিরেনি। গতকাল সকালে উক্ত সাবের আলীর লাশ জুম্ম অধ্যুষিত রাঙ্গিপাড়া গ্রামের রাস্তা থেকে উদ্ধার করে। তাই তাকে উদ্ধারের পর প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় লোকেরা সাবের আলীর মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে মেনে নেয়। কিন্তু হঠাৎ করে সন্ধ্যার দিকে চৌমুহনী বাজারে ও গভীর রাত আনুমানিক ১২ ঘটিকার দিকে সাবের আলীর মৃত্যুর জন্য জুম্মদের দায়ী করে সেটেলার বাঙালিরা লংগদু উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।


সাবের আলীর মৃতুকে কেন্দ্র করে গত ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১১ ইং তারিখ সকাল থেকে সেটেলার বাঙালিরা উপজেলা সদরসহ গুলশাখালী ও বগাচতর এলাকায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াতে থাকে। এক পর্যায়ে বেলা ১১ টায় বাঙালি ছাত্র পরিষদের সভাপতির নেতৃত্বে সেটেলার বাঙালীরা লংগদু উপজেলা সদরে এক বিাক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলের পর পরই রাঙ্গামাটি থেকে মাইনী দোর গামী একটি লঞ্চ তিনটিলা ঘাটে পৌঁছলে লঞ্চ থেকে নামিয়ে বাঘাইছড়ি উপজেলার শিজকমুখ অধিবাসী এপিলো চাকমা (২০) পিতা মনো রঞ্জন চাকমা ও বরকল উপজেলার সীমানা পাড়ার অধিবাসী মঙ্গলায়ন চাকমা (১৫) পিতা দয়া মোহন চাকমা নামে দু’জন জুম্মকে বেদম মারধর করে। এরপর বিকালের দিকে বগাচতর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও গুলশাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এর নেতৃত্বে সেটেলার বাঙালিরা রাঙ্গিপাড়া এলাকায় জুম্মদের উপর সংঘবদ্ধ হামলা করে এবং জুম্মদের ঘরবাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করে। এতে রাঙ্গি পাড়ায় এবং গুলশাখালী গ্রামে জুম্মদের ২৩ ঘরবাড়ী অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং ৬ টি বাড়ি লুটপাট ও ভাংচুর করা হয় বলে তথ্যানুসন্ধান দল জানতে পারে। এই হামলার সময় স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও বাঙালি সেটলারদের হামলা প্রতিরোধে কোন প্রকার পদক্ষেপ গ্রহন করেন নি।


গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স ও জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ট্রাষ্ট এর যৌথ তথ্যানুসন্ধান কালে জানা যায় যে, লংগদু উপজেলাধীন গুলশাখালী ও বগাচতর ইউনিয়নে সেটেলার বাঙালিরা দীর্ঘদিন ধরে জুম্মদের জায়গা-জমি জবরদখলের চেষ্টা করে আসছে। তারই অংশ হিসেবে গত ২১ ডিসেম্বর ২০১০ সেটেলার বাঙালিরা গুলশাখালী ইউনিয়নের শান্তিনগর গ্রামে হামলা চালায় এবং এতে ১৪ জন জুম্মকে মারপিট করে ও জুম্মদের ৫টি ঘরবাড়ী ভাঙচুর করে। বস্তুত: জুম্মদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়ে তাদের জায়গা-জমি জবরদখলের লক্ষে সেটেলার বাঙালিরা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সাবের আলীর মৃত্যুকে ব্যবহার করছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত জুম্মা অধিবাসীগন তথ্যানুসন্ধান দলকে জানান।
শুপারশিসূমহ:
এমতাবস্থায় এরূপ বর্বরোচিত হামলা বন্ধের লক্ষ্যে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার স্থায়ী সমাধানের স্বার্থে গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স এবং জাস্টিস মেকার্স বাংলাদেশ ট্রাষ্ট নিম্নোক্ত দাবী জানাচ্ছে-

(১) উভ্য় হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ জুম্মদের উপযুক্ত ক্ষতিপুরন, চিকিৎসা ও পুনর্বাসন করা হোক;

(২) উভ্য় সাম্প্রদারিক হামলায় জড়িত দোষী ব্যক্তিদের অচিরেই গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক;
(৪) পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সুপারিশ অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১ সংশোধন করে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করা হোক;
(৫) পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি দ্রুত ও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হোক;
(৬) সেটেলার বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।