Monday, August 1, 2011

বিশেষ প্রতিবেদন: পার্বত্য চট্রগ্রামে সংখালঘু জুম্মা পরিবারের উপর হামলার সময় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহীনি রহস্যজনকভাবে নিরব ভুমিকা পালন করেন।

২০১১ সালের প্রথমার্ধে ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিল মাসে দুটি পৃথক আক্রমনে পার্বত্য চট্টগ্রামে সংখালঘু পাহাড়ী আদিবাসী সম্প্রদায়ের শতাধিক বাড়ী, একটি স্কুল এবং দুইটি বৌদ্ধ মন্দির ভষ্মিভূত হ্য়, যাতে ছয় শতাধিক আদিবাসী সংখ্যালঘু পুরুষ, মহিলা এবং শিশু গৃহহীন এবং অনেক মারাত্বকভাবে আহত হন ।

সম্প্রতি গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স, নেদারল্যান্ডস এর বাংলাদেশ অবজারভার ও জাস্টিস মেকার্স বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট শাহানুর ইসলাম (সৈকত) এর নেতৃত্ত্বে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তথ্যানুসন্ধান দল গত ১৩ থেকে ২২ মে, ২০১১ ইং তারিখ পর্যন্ত আক্রান্ত অঞ্চল সরেজমিনে তদন্তের সময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাথে কথা বলেন। উক্ত তথ্যানুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় যে উক্ত আক্রমণে ৬৩৮ পাহাড়ী আদিবাসী সংখ্যালঘু সম্রদায়ের পুরুষ, মহিলা ও শিশু প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তাদের ঘরবাড়ি হারিয়ে এখনো অনেক অস্থায়ী আশ্রয় বা খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করছে।


তথ্যানুসন্ধানদল নিশ্চিত হয়েছে যে উভয় আক্রমনের সময় নিরাপত্তা বাহিনী উপস্থিত থেকে সহিংসতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন না করে রহস্যজনক ভাবে নীরব ভুমিকা পালন করে এবং ধ্বংসলীলা সচেতনভাবে প্রত্যক্ষ করে ।বাংলাদেশ সরকার উক্ত ঘটনাদুটি যথাযথভাবে তদন্তপুর্বক উপর্যুক্ত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে ।  স্থানীয় কর্তৃপক্ষও উক্ত হামলার ঘটনা দুটি তদন্তপুর্বক সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত এই হামলার জন্য দায়ী কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে নি।


সরকার উক্ত ঘটনার বিষয়ে স্বচ্ছভাবে তদন্ত সম্পন্নপুর্বক প্রতিবেদন প্রকাশ না করে উক্ত এলাকায় 'জরুরী' আইন জারী করে উক্ত এলাকায় মানবাধিকার কমীদের অঘোষিতভাবে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে । গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স, নেদারল্যান্ডস ও জাস্টিস মেকার্স বাংলাদেশ ট্রাস্ট দলের তদন্ত চলাকালে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা আছে বলে দৃঢ় সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং তথ্যানুসন্ধান দলের প্রধান এড। শাহানুর ইসলাম (সৈকত) কে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং পুলিশের জেলা বিশেষ শাখা সদস্যদের দ্বারা ইন্টারোগোরেট, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানি করা হয় ।


উল্ল্যেখিত আক্রমণদ্বয় পার্বত্য চট্টগ্রামে সংখালঘু পাহাড়ী আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্যদের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষায় সরকারের ব্যর্থতার সুস্পষ্ট উদাহরণ । উপরন্তু, উল্লেখিত আক্রমনের সময় আইন শৃংখলা বাহিনীর উপস্থিতি ও আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা না করে রহস্যজনক ভাবে নীরব থাকার বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্ত না করায় বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে সংখালঘু পাহাড়ী আদিবাসী সম্প্রদায়ের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা করতে হ্য় অনিচ্ছুক বা রক্ষা করতে অক্ষম বলে প্রতিয়মান হয়। এ জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্য আদিবাসী বিষয়ক আন্তর্জাতিক ফোরামের নিকট কৈফিয়ত দিতে হবে ।
ঘটনা-১

জমি দখলের উদ্দেশ্যে বাংগালী সেটলাররা জুম্মাদের উপর একের পর এক সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়ে আসছে।

গত ১৭ এপ্রিল 2011 খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলাধীন (গুইমারা থানার অন্তর্গত) হাফছড়ি ইউনিয়নের হাতিমুড়া এলাকায় সেটেলার বাঙালিরা জুম্মদের জায়গা-জমি দখল করতে গেলে পাহাড়ীরা বাধা দেয় এবং এতে এক পর্যায়ে সংঘর্ষের রূপ নিলে সেটেলার বাঙালিরা সংঘবদ্ধভাবে হাফছড়ি ইউনিয়নের শনখোলা পাড়া, তৈকর্মা পাড়া, রেমরম পাড়া, সুলুডং পাড়া, পথাছড়া ইত্যাদি জুম্ম গ্রামে এবং মানিকছড়ি উপজেলার মহামুনি ক্যজাই কার্বারী পাড়া ও মানিকছড়ি বাজারে হামলা চালিয়ে শতাধিক ঘরবাড়ীতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ভাঙচুর করে এবং চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে জুম্ম বাসযাত্রীদের নামিয়ে বেদম মারধর ও জখম করে। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রহস্যজনকভাবে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। এতে আশীষ চাকমা নামক এক জুম্ম এখনো নিখোঁজ রয়েছে।

গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স ও জাস্টিস মেকার্স বাংলাদেশ ট্রাষ্ট এর যৌথ তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে যে, মেনা মারমার ভোগদখলীয় প্রায় ১৫ একর পাহাড়ী ভূমি (বর্তমানে রুইহাঅং মারমা পীং পিজাঅং মারমার ভোগদখলীয়) জয়নাল পিসি নামে জনৈক সেটেলার বাঙালি দীর্ঘদিন ধরে জবরদখল করার চেষ্টা করে আসছিল। গত ১৪ এপ্রিল জুম্মদের বিজু, সাংগ্রাই ও বৈসু উৎসব চলাকালে সেটেলার বাঙালিরা হাফছড়ি ইউনিয়নের হাতিমুড়া এলাকায় উক্ত জায়গা-জমি দখল করতে যায়। সেসময় জুম্মদের বাধার মুখে সেটেলার বাঙালিরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। গত ১৭ এপ্রিল সকাল ১১ টার দিকে সেটেলার বাঙালিরা দলবদ্ধভাবে আবার উক্ত জমি জবরদখল করতে গেলে পাহাড়ীরা বাধা দেয় এবং এক পর্যায়ে সংঘর্ষের রূপ নেয়। এই সংঘর্ষে তিনজন সেটেলার বাঙালি নিহত এবং ১ জন গুরুতর জখম হয় যিনি পরবর্তীতে হাসপাতালে মৃর্ত্যুবরণ করেন।


এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রামগড়ের হাতিমুড়া, মানিকছড়ির গচ্ছ্যাবিল ইত্যাদি এলাকা থেকে শত শত সেটেলার বাঙালি সংঘবদ্ধ হয়ে জুম্মদের গ্রামে হামলা শুরু করে। এ সময় সেনাবাহিনীর টহল দল এলাকায় অবস্থান নিলেও সেটেলার বাঙালিদের কোন বাধা প্রদান করেনি বলে তথ্যানুসন্ধান দলের তদন্তে জানা গেছে। সেনা সদস্যরা রাস্তায় টহল দিতে থাকে আর অন্যদিকে সেটেলার বাঙালিরা জুম্ম গ্রামে ঢুকে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট শুরু করে। এ হামলায় হাফছড়ি ইউনিয়নের শনখোলা পাড়া, তৈকর্মা (কচু ভান্তে) পাড়া, রেমরম পাড়া, সুলুডং পাড়া এবং পথাছড়ায় য় ১টি বৌদ্ধ মন্দিরসহ প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ীসম্পূর্ণভাবে ভস্মিভূত হয়।
 
এ সময় সেটেলার বাঙালিরা খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের জালিয়াপাড়ায় শান্তি পরিবহনসহ যানবাহন থামিয়ে জুম্ম যাত্রীদের উপর হামলা করে। তাদেরকে গাড়ী থেকে নামিয়ে টেনে-হেচড়ে বেদম মারধর ও লাঠিপেটা করে। এতে কমপে ১৬ জন জুম্মকে জখম করা হয় বলে জানা যায়। আহতদের মধ্যে গুইমারার বটতলী গ্রামের বাসিন্দা মিজ মিথু মারমা (১৩) পিতা রেম্রাচাই মারমা এবং যৌথ খামার এলাকার বাজার চৌধুরী পাড়ার অধিবাসী পাইক্রা মারমা (৫০) স্বামী মংসা মারমা রয়েছে। তাদের মধ্যে মিজ মিথু মারমাকে গুরুতর জখম অবস্থায় মানিকছড়ি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

অন্যদিকে সন্ধ্যার দিকে সেটেলার বাঙালিরা নিহত বাঙালিদের লাশ নিয়ে মানিকছড়ি এলাকায় জঙ্গী মিছিল বের করে। অভিযোগ রয়েছে যে, লাশসহ মিছিল বের করার সময় প্রশাসনের তরফ থেকে সেটেলার বাঙালিদের বাধা প্রদান করা হয়নি। এভাবে সেটেলার বাঙালিদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে দিয়ে মানিকছড়ি উপজেলার মহামুনি এলাকায় ক্যজাই কার্বারী পাড়ায় হামলা চালানো হয়। এই হামলায় ক্যজাই কার্বারী পাড়ায় রাজার বৌদ্ধ মন্দিরসহ ১১টি জুম্ম ঘরবাড়ী সম্পূর্ণভাবে ভস্মিভূত হয়। অপরদিকে মানিকছড়ি বাজারে জুম্মদের ৬টি দোকান ও ৭টি বাড়ীঘর লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়। তার মধ্যে মংসাজাই মারমার মুদি দোকান, রাংহাঅং মারমার চা দোকান, উজ্জল রাখাইনের কাপড়ের দোকান, চাইহাপ্র“ মারমার মুদি দোকান লুটপাট হয় বলে তথ্যানুসন্ধান দলের তদন্তে জানা গেছে।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়া এবং চুক্তি অনুসারে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণে নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় সেটেলার বাঙালিরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় জুম্মদের জায়গা-জমি অব্যাহতভাবে জবরধখল করে চলেছে। এক্ষত্রে নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় সেটেলার বাঙালিরা নানা অজুহাত সৃষ্টি করে জুম্মদের উপর একে পর এক সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়ে আসছে।


সেই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে অশান্ত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষে নানাভাবে উস্কানীমূলক অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে। শনখলা পাড়ায় সংঘর্ষের প্রাথমিক পর্যায়ে ইউপিডিএফ-এর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা উত্তেজনা সৃষ্টির লক্ষে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে বলে তথ্যানুসন্ধান দলের নিকট স্থানীয় অধিবাসীরা অভিযোগ করেন।

ঘটনা-২
বসত বাড়ী থেকে উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে বাংগালী সেটলাররা পাহাড়ী জুম্মাদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা চালায়।

জনৈক বাংগালী সেটলার এর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গত ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১১ ইং তারিখে রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলাধীন গুলসাখালী ইউনিয়নের গুলশাখালী ও রাঙ্গীপাড়া এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে সেটেলার বাঙালি কর্তৃক জুম্মদের গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলা ও ঘরবাড়ীতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ঘটায়।
গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স ও জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ট্রাষ্ট এর যৌথ সরেজমিন তদন্তে জানা যায় যে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১১ লংগদু উপজেলাধীন গুলশাখালী ইউনিয়নের রহমতপুর গ্রাম থেকে সাবের আলী (৩৫) পিতা নেহাত আলি ও মো: শহীদ (৩৩) পিতা জুল্যা পাগালা নামে দু’জন সেটেলার বাঙালি গুলশাখালী এলাকায় জঙ্গল থেকে ফুলঝাড়– সংগ্রহ করতে যায়। তাদের মধ্যে মো: শহীদ ঘরে ফিরলেও সাবের আলী ফিরেনি। গতকাল সকালে উক্ত সাবের আলীর লাশ জুম্ম অধ্যুষিত রাঙ্গিপাড়া গ্রামের রাস্তা থেকে উদ্ধার করে। তাই তাকে উদ্ধারের পর প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় লোকেরা সাবের আলীর মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে মেনে নেয়। কিন্তু হঠাৎ করে সন্ধ্যার দিকে চৌমুহনী বাজারে ও গভীর রাত আনুমানিক ১২ ঘটিকার দিকে সাবের আলীর মৃত্যুর জন্য জুম্মদের দায়ী করে সেটেলার বাঙালিরা লংগদু উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।


সাবের আলীর মৃতুকে কেন্দ্র করে গত ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১১ ইং তারিখ সকাল থেকে সেটেলার বাঙালিরা উপজেলা সদরসহ গুলশাখালী ও বগাচতর এলাকায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াতে থাকে। এক পর্যায়ে বেলা ১১ টায় বাঙালি ছাত্র পরিষদের সভাপতির নেতৃত্বে সেটেলার বাঙালীরা লংগদু উপজেলা সদরে এক বিাক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলের পর পরই রাঙ্গামাটি থেকে মাইনী দোর গামী একটি লঞ্চ তিনটিলা ঘাটে পৌঁছলে লঞ্চ থেকে নামিয়ে বাঘাইছড়ি উপজেলার শিজকমুখ অধিবাসী এপিলো চাকমা (২০) পিতা মনো রঞ্জন চাকমা ও বরকল উপজেলার সীমানা পাড়ার অধিবাসী মঙ্গলায়ন চাকমা (১৫) পিতা দয়া মোহন চাকমা নামে দু’জন জুম্মকে বেদম মারধর করে। এরপর বিকালের দিকে বগাচতর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও গুলশাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এর নেতৃত্বে সেটেলার বাঙালিরা রাঙ্গিপাড়া এলাকায় জুম্মদের উপর সংঘবদ্ধ হামলা করে এবং জুম্মদের ঘরবাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করে। এতে রাঙ্গি পাড়ায় এবং গুলশাখালী গ্রামে জুম্মদের ২৩ ঘরবাড়ী অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং ৬ টি বাড়ি লুটপাট ও ভাংচুর করা হয় বলে তথ্যানুসন্ধান দল জানতে পারে। এই হামলার সময় স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও বাঙালি সেটলারদের হামলা প্রতিরোধে কোন প্রকার পদক্ষেপ গ্রহন করেন নি।


গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স ও জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ট্রাষ্ট এর যৌথ তথ্যানুসন্ধান কালে জানা যায় যে, লংগদু উপজেলাধীন গুলশাখালী ও বগাচতর ইউনিয়নে সেটেলার বাঙালিরা দীর্ঘদিন ধরে জুম্মদের জায়গা-জমি জবরদখলের চেষ্টা করে আসছে। তারই অংশ হিসেবে গত ২১ ডিসেম্বর ২০১০ সেটেলার বাঙালিরা গুলশাখালী ইউনিয়নের শান্তিনগর গ্রামে হামলা চালায় এবং এতে ১৪ জন জুম্মকে মারপিট করে ও জুম্মদের ৫টি ঘরবাড়ী ভাঙচুর করে। বস্তুত: জুম্মদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়ে তাদের জায়গা-জমি জবরদখলের লক্ষে সেটেলার বাঙালিরা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সাবের আলীর মৃত্যুকে ব্যবহার করছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত জুম্মা অধিবাসীগন তথ্যানুসন্ধান দলকে জানান।
শুপারশিসূমহ:
এমতাবস্থায় এরূপ বর্বরোচিত হামলা বন্ধের লক্ষ্যে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার স্থায়ী সমাধানের স্বার্থে গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স এবং জাস্টিস মেকার্স বাংলাদেশ ট্রাষ্ট নিম্নোক্ত দাবী জানাচ্ছে-

(১) উভ্য় হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ জুম্মদের উপযুক্ত ক্ষতিপুরন, চিকিৎসা ও পুনর্বাসন করা হোক;

(২) উভ্য় সাম্প্রদারিক হামলায় জড়িত দোষী ব্যক্তিদের অচিরেই গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক;
(৪) পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সুপারিশ অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১ সংশোধন করে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করা হোক;
(৫) পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি দ্রুত ও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হোক;
(৬) সেটেলার বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।