Wednesday, March 21, 2012

ঘুষ গ্রহন , থানা হাজতে নির্যাতন এবং নির্যাতন পরবর্তী অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগে ৯ কারা ও পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নওগাঁ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের ।

 

গ্রেফতারী ও বাড়ীর মালামাল ক্রোক পরোয়ানাভুক্ত এক আসামীকে গ্রেফতার ও তার বাড়ীর মালামাল ক্রোক না করার শর্তে নওগাঁ জেলার বদলগাছী থানা কর্তৃক নিয়মিত ঘুষ গ্রহন, পরবর্তীতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের চাপের মুখে গ্রেফতার করতঃ থানায় নিয়ে আসামীকে অমানবিক ও বর্বোরচিত নির্যাতন এবং নির্যাতন পরবর্তী মুমূর্ষু রোগীর পায়ে ডান্ডা বেরী, হাতে হ্যান্ড কাফ ও মাজায় মোটা রশি দিয়ে বেঁধে রেখে অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ এর সহযোগীতায় মৃত ভিক্টিমের স্ত্রী মোছাঃ আফরোজা খাতুন নওগাঁ জেলা কারাগারের সুপারিনটেডেন্ট মোঃ আনোয়ারুজ্জামানজেলার মোঃ ফারুক আহমেদবদলগাছী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মাহফুজুল হক  বর্তমান সেকেন্ড অফিসার এস আই রফিকুল ইসলামসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আজ ২১মার্চ২০১২ ইং তারিখ রোজ বুধবার নওগাঁ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট  আমলী আদালত-০৫ এ বাংলাদেশ দন্ড বিধির ১৬১/১৬৪/৩২৩/৩২৪/৩০৪ (ক)/৩৪/৫০৬ ধারায় সি আর ৩৪ (বদল)/২০১২ মামলা দায়ের করে।

মামলার অভিযোগে প্রকাশ, ঢাকা মহানগরীর শাহবাগ থানায় দায়েরকৃত একটি প্রতারনা মামলায় গ্রেফতার ও বাড়ীর মালামাল ক্রোক না করার শর্তে নওগাঁ জেলার বদলগাছী থানার এ এস আই রবিউল ইসলাম, সেকেন্ড অফিসার এস আই মোঃ রফিকুল ইললাম, এস আই তৌহিদুল আলম, এস আই কারিবুল হাসান, সিপাহী আব্দুর রাজ্জাকসহ অপরিচিত বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ভিক্টিম আব্দুল বারিক দুলু ও তার স্ত্রী মোছাম্মৎ আফরোজা বেগমের নিকট থেকে নিয়মিত ঘুষ গ্রহন করেন। অবশেষে, গত ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ ইং তারিখে এ এস আই রবিউল ইসলাম ভিক্টিমকে গ্রেফতার ও বাড়ীর মালামাল ক্রোক না করার শর্তে অত্র মামলার বাদীনি মোছাম্মৎ আফরোজা খাতুনের নিকট থেকে ২০,০০০/-টাকা ঘুষ দাবী করলে গত ১৮ ডিসেম্বর ২০১১ ইং তারিখে বদল্গাছী থানাধীন মিঠাপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোঃ আব্দুল জলিলের মাধ্যমে বাদীনি ৫,০০০/- টাকা ঘুষ প্রদান করেন এবং পরবর্তী ২ মাস ভিক্টিমকে গ্রেফতার বা বাড়ীর মালামাল ক্রোক না করার শর্তে আসামী আরও ৫০,০০০/-টাকা ঘুষ দাবী করলে বাদীনি গত ২৮ /১২/১১ ইং তারিখে ২০,০০০/- ঘুষ প্রদানের কথা স্বীকার করেন।

ইতমধ্যে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের চাপে গত ২০/১২/১১ ইং তারিখ আনুমানিক সকাল ১১.০০ ঘটিকার সময় পুলিশ ভিক্টিম আব্দুল বারী দুলুকে গ্রেফতার করে বদলগাছী থানায় নিয়ে থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ ফাহফুজুল হক, বর্তমান সেকেন্ড অফিসার এস আই রফিকুল ইসলাম, এস আই তৌহিদুল আলম, এস আই কারিবুল হাসান ও সিপাহী আব্দুর রাজ্জাকসহ বেশ কয়েকজন অজ্ঞাতনামা পুলিশ সদস্য রাতভর ইলেক্ট্রিক শক, লাথি, ঘুসি, লাঠি দিয়ে পায়ের পাতায় পেটানোসহ পা দিয়ে পাড়ায়ে ভিক্টিমকে নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে ভিক্টিম গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে শুধু খাবার স্যালাইন খাওয়ায়ে হাজতখানার মেঝেতে ফেলে রাখে। পরদিন ২১/১২/২০১ ইং তারিখ সকালে মোবাইল ফোনে বাদীনি ভিক্টিমের অসুস্থাতার খবর পেয়ে থানায় উপস্থিত হলে আসামী এস আই কারিবুল হাসান তাকে থানার এক পার্শে ডেকে নিয়ে ভিক্টিমের চিকিত্সার জন্য ২০,০০০/- টাকা ঘুষ দাবী করেন। ভিক্টিম ঐ সময় তা প্রদানে অপারগ হওয়ায় দুজন সিপাহী ভিক্টিমকে পাঁজা কোলে করে প্রিজনভ্যানে তুলে বদগাছি থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বহিঃবিভাগে চিকিত্সা শেষে নওগাঁ জেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কোর্ট হাজতে ফেলে রাখে। পরর্বর্তীতে কোর্ট পুলিশ পাঁজা কোলে করে ভিক্টিমকে সংশ্লিষ্ট আদালতে উপস্থিত করলে বিজ্ঞ আদালত ভিক্টিমকে উন্নত চিকিত্সার মৌখিক নির্দেশসহ তাকে নওগাঁ জেলা কারাগারে প্রেরন করেন।

নওগাঁ জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ভিক্টিমের উন্নত চিকিত্সা প্রদানের কোন ব্যবস্থা না করে কারা হাসপাতালে ভর্তি করেন এবং ২১/১২/১ ইং তারিখ দিবাগত রাতে ভিক্টিমের শারীরিক অবস্থা চরম অবনতি ঘটলে তাকে কারা ফার্মাসিস্ট চিকিত্সা প্রদান করেন। কিন্তু তাতে ভিক্টিমের শারীরিক অবস্থার কোন উন্নতি না হলেও জেল কর্তৃপক্ষ সেদিন রাতে ভিক্টিমকে কারাগারের বাইরে অন্য কোথাও উন্নত চিকিত্সার ব্যবস্থা না করে পরদিন ২২/১২/১১ ইং তারিখ সকালে মুমূষু রোগীকে পায়ে ডান্ডা বেরী, হাতে হ্যান্ড কাফ ও মাজায় মোটা রশি বেঁধে নওগাঁ সদর হাসপতালে ভর্তি করেন। সেখানে চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অচেতন ভিক্টিম তার পোশাকে প্রসাব-পায়খানা করলেও তা পরিস্কারের জন্য পাহাড়ারত জেল পুলিশের নিকট অনুনয় বিনয় করলেও বাদীনিকে তা করতে দেওয়া হয় নি। অবশেষে ২২/১২/১ ইং তারিখ আনুমানিক সন্ধ্যা ৭.১৫ মিনিটের সময় অসুস্থ ভিক্টিম পায়ে ডান্ডা বেরী, হাতে হ্যান্ড কাফ ও মাজায় মোটা রশি বাঁধা অবস্থায় চিকত্সা অবহেলায় মৃত্যু বরণ করেন।

ঘটনাটি মানবাধিকারের চরম লংঘন এবং ঘটনা সম্পর্কে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ এর প্রতিষ্টাতা মহাসচিব এডভোকেট শাহানুর ইসলাম এর নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট্য একটি তথ্যানুসন্ধান দল বিষয়টি সম্পর্কে সরেজমিনে তথ্যানুসন্ধন করেন। এসময় ঘটনা সম্পর্কে অভিযুক্তদে বক্তব্য গ্রহনকালে বদলগাছী থানার সেকেন্ড অফিসার এস আই মোঃ রফিকুল ইসলাম ভিক্টিম ও বাদিনির নিকট থেকে ঘুষ গ্রহনের বিষয়টি অকপটে স্বীকার করে আসামীর নিকট থেকে চা, বিড়ি, সিগারেট ও মোটর সাইকেলের জালানী তেল ক্রয়ের জন্য টাকা নিলে দোষের কিছু নেই বলে প্রকাশ করেন এবং বর্নিত ঘটনা নিয়ে ভবিষ্যতে আর বাড়াবাড়ি না করার জন্য এডভোকেট শাহানুর ইসলামকে হুমকি প্রদান করেন।

বাদীনি মোছাম্মৎ আফরোজা বেগম একজন মহিলা, নিতান্ত গড়ীব, অসহায় ও অস্বচ্ছল হওয়ায় ঢাকা মহানগরীর কাকরাইলস্থ  মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ এর সার্বিক সহায়তার বাদীনি আজ অত্র মামলাটি দায়ের করেন

নওগাঁ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত-০৫ এর বিজ্ঞ হাকিম আবু বাছেদ মোঃ বুলু মিয়া বাদীনির বক্তব্য রেকর্ড করে ভিক্টিমের  মৃত্যু সংক্রান্তে অতীতে কোন ইউ ডি মামা দায়ের হয়েছে কিনা সে বিষয়ে প্রতিবেদন প্রেরনের জন্য নওগাঁ সদর থানাকে আদেশ প্রদান করেন। একই সাথে আগামী ১৩ মে ২০১২ ইং তারিখে অত্র মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।

বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করবেন জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব এডভোকেট শাহানুর ইসলাম ও নওগাঁ বারের সদস্য মোঃ আশিক আল ইমরান হিল্লোল এবং মামলা দায়েরে সার্বিক সহযোগীতা করেন জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ এর উপদেষ্ঠা মোহাম্মদ জাহাংগীর আলম 

No comments:

Post a Comment