মেহেরপুরে সমকামীতা ঠেকাতে এক যৌন সংখ্যালঘু
সমকামী তরূনীর
বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়েরপূর্বক জেল হাজতে প্রেরণের ঘটনায় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান
জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
একই সাথে উক্ত ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক জড়িত অপরাধীকে
বিচারে দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জোড় দাবী জানিয়েছে জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ
।
গত ৩০ জুন ২০২২ খ্রীষ্টাব্দ তারিখে অনলাইন পত্রিকা দেশদর্পণ ডট কম এ প্রকাশিত খবর অনুযায়ী যানা যায় যে, মেহেরপুরে দুই তরুনীর সমকামীতা ঠেকাতে এক তরুনীর নামে অপহরণ মামলা করেছে অপর এক তরুনীর মা। এ ঘটনায় গত বুধবার (২৯ জুন) তানিয়া খাতুন (২১) নামের এক তরুনীকে আটক করেছে মুজিবনগর থানা পুলিশ। আটক ওই তরুনী মুজিবনগর উপজেলার গৌরীনগর গ্রামের মুবারক আলীর মেয়ে। পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়
ইউপি সদস্য আব্দুল হান্নান জানান, দুজনের বয়সের ফারাক
থাকলেও একসাথে বান্ধবীর মত চলাফেরা করতো। দীর্ঘদিন চলাচলের এক পর্যায়ে তারা দুজনেই
একে অপরের প্রেমে পড়ে যায়। আটক তানিয়া খাতুন মাঝে মধ্যেই নাবালিকা এক তরুনীকে নিয়ে
উধাও হয়ে যেতো। দুই-তিন তারা আত্মগোপনে থাকতো। সম্প্রতি রোজার মধ্যে তাদের দুজনকে
মেহেরপুরের একটি বাসা থেকে উদ্ধার করে দুই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপরও
তাদের মেলামেশা বন্ধ করা যায়নি। সুযোগ পেলেই তারা পালিয়ে যেতো।
মুজিবনগর
থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার (ওসি) মেহেদী রাসেল জানান,উপজেলার
গৌরীনগর গ্রামের নাবালিকা এক তরুনীর মা বাদী হয়ে অপহরণের অভিযোগ এনে একই গ্রামের
তানিয়া খাতুন, তার পিতা মুবারক হোসেন ও মা আনোয়ারা
খাতুনকে আসামী করে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধিত) ২০০৩ এর ৭ ও
৩০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ওসি
মেহেদী রাসেল আরও বলেন,স্থানীয়দের ভাষ্য মতে তানিয়া খাতুন
নাবালিকা ওই তরুনীকে নিয়ে মাঝে মধ্যে হারিয়ে যেতো। এনিয়ে এলাকায় তারা দুজন সমকামী
হিসেবে জনশ্রুতি তৈরী হয়েছে।
মেহেরপুর
কোর্ট পরিদর্শক গোলাম মোহাম্মদ জানান,ভিকটিম ও আসামী তানিয়া
খাতুনকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (২য়) তরিকুল ইসলামের আদালতের নিলে তারা দুজনেই ২২
ধারায় জবান বন্দী দেন। জবানবন্দী শেষে ভিকটিমের বয়স নির্ধারণের ডাক্তারী পরীক্ষা
শেষে বাবা মায়ের হেফাজতে থাকার ও আসামী তানিয়া খাতুনকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ
দেন।
উল্লেখ্য,এর আগেও ওই দুই তরুনীর বিরুদ্ধে সমকামীতার অভিযোগ উঠেছিল। এ নিয়ে
এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। পারিবারিক ভাবে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেও
কোন লাভ হয়নি। অনেকটা বাধ্য হয়েই আইনের আশ্রয়ে গিয়েছে বলে স্থানীয় অনেকেই জানান।
জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব এবং বিশিষ্ট আইনজীবী
ও সমকামী অধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট শাহানুর ইসলাম সৈকত শুধুমাত্র যৌন প্রবৃত্তিগত
সংখ্যালঘু সমকামী সম্পর্কের কারণে একজন মহিলাকে মিথ্যা অপহরণের মামলায় অভিযুক্ত
করে গ্রেফতারপূর্বক কারাগারে পাঠানোর ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
পাশাপাশি শুধুমাত্র যৌন সংখ্যালঘু সমকামী লেসবিয়ান হওয়ার কারণে মিথ্যা
মামলায় জড়িত করে গ্রেফতারপূর্বক কারাগারে পাঠানোর ঘটনা লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য মূলক
এবং জাতিসংঘ ঘোষিত মৌলিক মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন বলেই অ্যাডভোকেট শাহানূর
ইসলাম সৈকত মনে করতেন।
অ্যাডভোকেট শাহনূর ইসলাম সৈকত মনে করেন উল্লেখিত ঘটনাগুলো বাংলাদেশে
কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং সারা বাংলাদেশে যৌন প্রবৃত্তিগত সংখ্যালঘু সমকামী ব্যক্তির
বিরূদ্ধে সংঘটিত বৈষম্য, হত্যা, আঘাত, মিথ্যা মামলায় জড়িত করাসহ অসংখ্য মানবাধিকার
লংঘন বিষয়ের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র।
সারাদেশে পরিবার থেকে সমাজ এবং সমাজ থেকে কর্মস্থল ও রাষ্ট্র সর্বত্র
যৌন প্রবৃত্তিগত সমকামী লেসবিয়ান সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা প্রতিনিয়ত বৈষম্যসহ
বিভিন্ন ধরণের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হলেও সামাজিক অগ্রহণযোগ্যতা ও অসহিষ্ণুতার
কারণে সেসব ঘটনার অধিকাংশ জনসম্মুখের অগোচরে রয়ে যাচ্ছে বলে অ্যাডভোকেট শাহানুর
ইসলাম সৈকত মনে করেন।
পরিশেষে, অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম যৌন সংখ্যালঘু সমকামী ব্যক্তিদের সুরক্ষা
প্রদানের জন্য দন্ডবিদির ৩৭৭ ধারা বাতিলপূর্বক তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান
এবং সমকামী সুরক্ষা আইন প্রণয়নের জোড় দাবী জানিয়েছেন।
No comments:
Post a Comment